তারাবির নামাজের নিয়ম -তারাবির নামাজের নিয়ত, মোনাজাত বাংলা অর্থ সহ জানুন

রমজান মাসে রোজা আমাদের জন্য যেমন গুরুত্বপূর্ণ ঠিক তেমনি রমজানের তারাবির নামাজ আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যদি তারাবির নামাজের নিয়ম, নিয়ত ও মোনাজাত বাংলা অর্থসহ জানতে চাই তবে এই আর্টিকেল মনোযোগ সহকারে পড়ুন। এর পাশাপাশি আরো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জানতে পারবেন। 
তারাবির নামাজের নিয়ম
রমজান মাসে তারাবির নামাজ আদায় করা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য সুন্নত। আর এই তারাবির নামাজ আমরা মূলত ২ রাকাত করে মোট ৮ রাকাত কিংবা ২০ রাকাত পড়ে থাকি। আর এই তারাবি নামাজ পড়ার সঠিক নিয়ম, নামাজের সঠিক নিয়ত এবং মোনাজাত সহ আরো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জানতে নিচে বিস্তারিত পড়ে সঠিক টা জানুন। 

পোস্ট সূচিপত্রঃ তারাবির নামাজের নিয়ম, নিয়ত, মোনাজাত ও এর অর্থ সম্পর্কে জানুন 

তারাবির নামাজের নিয়ম 

রমজান মাসে আমরা রোজা পালনের পাশাপাশি ২০ রাকাত আবার অনেকে ৮ রাকাত তারাবি নামাজ পড়ে থাকি। কেননা তারাবি নামাজ আদায় করা সুন্নত। আর এই তারাবির নামাজ মূলত এশার নামাজের পরে পড়তে হয় যেটা আমাদের সকলেরই জানা। চলুন আরো স্পষ্টভাবে তারাবির নামাজের সঠিক নিয়ম জেনে নিই।  

তারাবির নামাজ যেহেতু এশার নামাজ পরে পড়তে হয় সেহেতু্‌... 
  • প্রথমে এশার ৪ রাকাত সুন্নত, ৪ রাকাত ফরজ ও ২ রাকাত সুন্নত নামাজ পড়ে নিন। 
  • এরপরে দুই রাকাত দুই রাকাত করে তারাবির সুন্নত নামাজ পড়া শুরু করুন। 
  • অর্থাৎ প্রত্যেক দুই রাকাত নামাজ শেষ করে আবার নতুন করে দুই রাকাতের জন্য নিয়ত করুন। 
  • প্রতি রাকাতে সূরা ফাতিহার সাথে বড় কিংবা ছোট যে কোন সূরা মিলিয়ে পড়ুন। 
  • তারাবির নামাজে মোট ১০ বার সালাম ফিরিয়ে ২০ রাকাত নামাজ পূর্ণ করুন। 
  • অতঃপর তারাবির নামাজ শেষ হলে এশার বেতের নামাজ পড়ে নিন। 
মেয়েদের ক্ষেত্রে তারাবির নামাজ পড়ার নিয়ম... 
মেয়েদের ক্ষেত্রে তারাবির নামাজ পড়ার নিয়ম পুরুষদের মতো। অর্থাৎ মেয়েরা পুরুষের মতোই ২ রাকাত করে তারাবির নামাজ পড়বে উপরোক্ত নিয়মে। তবে মেয়েরা চাইলে ঘরে কিংবা মসজিদে যে কোন জায়গায় তারাবির নামাজ পড়তে পারেন। 

তারাবির নামাজের চার রাকাত পর পর যে দোয়া পড়তে হবে 

আমরা যখন তারাবির নামাজ পড়বো তখন প্রতি চার রাকাত পর পর আমাদের নির্দিষ্ট একটি দোয়া পড়তে হয়। এই দোয়াটি আমরা অনেকেই জানি আবার অনেকেই জানিনা। তবে এই দোয়ার পাশাপাশি আরো কিছু দোয়া পড়া যায় যেটা আমরা এখন জানবো।

অনেক ক্ষেত্রে আমরা আরবি দোয়া জানলেও এর অর্থ জানিনা। তবে আমাদের এইসব দোয়া এবং অর্থ জানা উচিত। চলুন তারাবির নামাজের চার রাকাত পর পর যেসব দোয়া পড়তে হয় সেটা এবং এর অর্থ জেনে নিই। 

আরবি দোয়াঃ سُبْحَانَ الْمَلِكِ الْقُدُّوسِ

উচ্চারণঃ সুবহানাল মালিকিল কুদ্দুস। 

বাংলা অর্থঃ পবিত্র মহান বাদশা, পরম পবিত্র সত্তা। (এই দোয়াটি আমরা তিনবার পড়তে পারি)

দরুদ শরীফ
আরবি দোয়াঃ اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ، اللَّهُمَّ بَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا بَارَكْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ

উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা সাল্লিয়ালা মুহাম্মাদিও ওয়া'আলা আলি মুহাম্মাদ, কামা সাল্লায়তা আলা'ইব্রহিম, ওয়া'আলা আলি ইব্রহিম ইন্নাকা হামিদুম্মাজিদ। আল্লাহুম্মা বারিক আলা মুহাম্মাদিও ওয়া'আলা আলি মুহাম্মাদ, কামা বারক্তাআলা ইব্রহিম, ওয়া'আলা আলি ইব্রহিম ইন্নাকা হামিদুম্মাজিদ।  

বাংলা অর্থঃ হে আল্লাহ! আমাদের নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তার পরিবারের উপর আপনার রহমত বর্ষণ করুন, যেমন আপনি হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম এবং তার পরিবারের উপরে রহমত বর্ষণ করেছিলেন। নিশ্চয়ই আপনি প্রশংসার যোগ্য, মহামান্বিত। 
হে আল্লাহ মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তার পরিবারের উপরে বরকত দান করুন।যেমন আপনি ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম ও তার পরিবারের উপরে বরকত দান করেছিলেন। নিশ্চয়ই আপনি প্রশংসার যোগ্য, মহামান্বিত। 

দোয়া ইউনুস
আরবি দোয়াঃ لَا إِلٰهَ إِلَّا أَنتَ سُبْحَانَكَ إِنِّي كُنتُ مِنَ الظَّالِمِينَ

উচ্চারণঃ লা ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা ইন্নি কুনতু মিনাজ জোয়ালিমিন। 

বাংলা অর্থঃ তুমি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই, তুমি পবিত্র, আমি অবশ্যই অন্যায়কারীদের অন্তর্ভুক্ত হয়েছি।

ইস্তেগফার
আরবি দোয়াঃ اَسْتَغْفِرُ اللّٰهَ رَبِّيْ مِنْ كُلِّ ذَنْبٍ وَّاَتُوْبُ اِلَيْهِ

উচ্চারণঃ আস্তাগফিরুল্লাহা রাব্বি মিন কুল্লি জানবিন ওয়া আতুবু ইলায়হি। 

বাংলা অর্থঃ আমি আমার রব আল্লাহর কাছে সকল পাপের ক্ষমা চাই, আর তার দিকে প্রত্যাবর্তন করি। 

তারাবির নামাজের নিয়ত ও অর্থসহ মোনাজাত 

প্রতিটি কাজের জন্য যেমন আমাদের পূর্বে থেকে নিয়ত করতে হয় ঠিক তেমনি তারাবির নামাজের সময়ও আমাদের নিয়ত করে নামাজ পড়তে হয়। এরপরে আমরা যখন নিয়ত করে নামাজ শেষ করবো তখন তারাবির একটা নির্দিষ্ট মোনাজাত রয়েছে যেটা আমাদের করা উচিত। তাই তারাবির নিয়ত এবং মোনাজাত সম্পর্কে আমরা এখন সুস্পষ্টভাবে জানবো। 

তারাবির নামাজের নিয়ত
আরবি নিয়তঃ نَوَيْتُ أَنْ أُصَلِّيَ لِلَّهِ تَعَالَى صَلَاةَ التَّرَاوِيحِ رَكْعَتَيْنِ (مُتَمِّمًا/مُقْتَدِيًا) لِلَّهِ تَعَالَى

উচ্চারণঃ নাওয়াইতু আন উসাল্লিয়া লিল্লাহি তা'আলা সালাতাত তারাবিহি রাক'আতায়নি (মুতাম্মিমান/মাকতাদিয়ান) লিল্লাহি তায়ালা। 

বাংলা অর্থঃ আমি নিয়ত করলাম আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টির জন্য দুই রাকাত তারাবির নামাজ পড়ার। (যদি ইমামের সাথে পড়ে তাহলে মাকতাদিয়ান আর একা পরলে মুতাম্মিমান বলতে হবে)   

নিয়ত শব্দের অর্থ মূলত ইচ্ছা। তাই আপনি চাইলে তারাবির নামাজ নিয়ত সরাসরি নিজের মনের মত করে বাংলা ভাষায় বলে নামাজ পড়তে পারবেন। এতে করে কোন সমস্যা ছাড়াই আল্লাহ আপনার নামাজ কবুল করবেন ইনশা আল্লাহ। তার জন্য আপনি এইভাবে পড়তে পারেন... 

আমি আল্লাহ তাআলার নামে কেবলামুখী হয়ে এই ইমামের পেছনে দাঁড়িয়ে তারাবির দুই রাকাত সুন্নত নামাজ আদায় করিতেছি, আল্লাহু আকবার। 

তারাবির নামাজের অর্থসহ মোনাজাত 
আরবি মোনাজাতঃ بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ

اللَّهُمَّ أَنْتَ رَبِّي لَا إِلٰهَ إِلَّا أَنْتَ، خَلَقْتَنِي وَأَنَا عَبْدُكَ، وَأَنَا عَلَىٰ عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ، أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا صَنَعْتُ، أَبُوءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَيَّ، وَأَبُوءُ بِذَنْبِي، فَاغْفِرْ لِي، فَإِنَّهُ لَا يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا أَنْتَ اللَّهُمَّ اغْفِرْ لَنَا وَلِوَالِدِينَا وَلِأَهْلِينَا وَلِجَمِيعِ الْمُسْلِمِينَ، وَأَدْخِلْنَا الْجَنَّةَ مَعَ الْأَبْرَارِ، وَنَجِّنَا مِنْ عَذَابِ النَّارِ اللَّهُمَّ اجْعَلْنَا مِنَ الْمُتَّقِينَ، وَزَيِّنَّا بِالتَّقْوَىٰ، وَبَارِكْ لَنَا فِي حَيَاتِنَا، وَاحْفَظْنَا مِنْ جَمِيعِ الْمَصَائِبِ اللَّهُمَّ اجْعَلْنَا مِنْ أَهْلِ الْقُرْآنِ، وَأَحْسِنْ خَاتِمَتَنَا، وَرُزُقْنَا جَنَّةَ الْفِرْدَوْسِ بِرَحْمَتِكَ، وَاعْفُ عَنَّا وَاغْفِرْ لَنَا آمِينَ يَا رَبَّ الْعَالَمِينَ

উচ্চারণঃ বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।

আল্লাহুম্মা আনতা রাব্বি, লা ইলাহা ইল্লা আন্তা। খালাকতানি ওয়া আনা আবদুক, ওয়া আনা ‘আলা আহদিকা ওয়া ওয়া‘দিকা মাস্তাত্তু। আউজু বিকা মিন শার্রি মা সানা‘তু। আবূ’উ লাকা বিনি‘মাতিকা ‘আলাইয়া, ওয়া আবূ’উ বিযাম্বি, ফাগফিরলি, ফা ইন্নাহু লা ইয়াগফিরুয যুনুবা ইল্লা আন্তা।

আল্লাহুম্মাগফির লানা, ওয়ালি ওয়ালিদিনা, ওয়ালি আহলিনা, ওয়ালি জামিইল মুসলিমিন। ওয়া আদখিলনাল জান্নাতা মা‘আল আবরার। ওয়া নাজ্জিনা মিন আযাবান্নার। আল্লাহুম্মাজ‘আলনা মিনাল মুত্বাকিন। ওয়া জায়্যিননা বিত তাকওয়া। ওয়া বারিক লানা ফি হায়াতিনা। ওয়া হাফিজনা মিন জামি‘িল মাসায়িব।

আল্লাহুম্মাজ‘আলনা মিন আহলিল কুরআন। ওয়া আহসিন খাতিমাতানা। ওয়া রুযুকনা জান্নাতাল ফিরদাউসি বিরাহমাতিকা। ওয়া‘ফু‘আন্না ওয়া‘গফির লানা। আমিন ইয়া রব্বাল ‘আলামীন।

বাংলা অর্থঃ বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম। 

হে আল্লাহ! আপনি আমাদের রব, আপনি ছাড়া কোন ইলাহ নেই। আপনি আমাদের সৃষ্টি করেছেন, আমরা আপনারই বান্দা। আমরা আপনার অঙ্গীকার ও প্রতিশ্রুতির ওপর যতটা সম্ভব অটল থাকার চেষ্টা করি। হে আল্লাহ! আমরা আমাদের কৃতকর্মের অনিষ্ঠ থেকে আপনার কাছে আশ্রয় চাই। আমরা স্বীকার করে যে, 

আপনি আমাদের প্রতি যে নিয়ামত দিয়েছেন তা সত্যিই অসিম, এবং আমরা স্বীকার করি যে, আমরা অনেক পাপ করেছি। হে আল্লাহ! আপনি আমাদের ক্ষমা করুন। কেননা আপনি ছাড়া অন্য কেউ গুনাহ ক্ষমা করতে পারে না। হে আল্লাহ! আপনি আমাদের গুনাহ মাফ করে দিয়ে আমাদের অন্তরকে হেদায়েত দিন। 

আমাদের নেক আমল করার তৌফিক দান করুন। হে আমার রব! আপনি আমার বাবা মাকে ক্ষমা করুন, আমাদের পরিবার পরিজন ও সকল মুসলিম উম্মাহকে রহম করুন। আমাদেরকে জান্নাতুল ফেরদৌসের প্রবেশ করান এবং জাহান্নামের শাস্তি থেকে রক্ষা করুন। 

হে আল্লাহ! আমাদেরকে কুরআনের সঙ্গী করুন, আমাদের শেষ পরিণতি সুন্দর করুন এবং আপনার রহমতের দ্বারা জান্নাতুল ফেরদাউসে আমাদের স্থান দিন। আমাদের উপরে দয়া করুন এবং আমাদেরকে ক্ষমা করুন। আমিন, ইয়া রব্বুল আল-আমিন। 

তারাবির নামাজ কত রাকাত ইসলামিক দৃষ্টিকোণ  

তারাবির নামাজ কত রাকাত এই নিয়ে কয়েকটি মতভেদ রয়েছে। কেউ কেউ ২০ রাকাত আবার কেউ ৮ রাকাত তারাবির নামাজ পড়ে। তবে আমাদের কুরআন ও হাদিসের আলোকে তারাবির নামাজ কত রাকাত পড়া উচিত এটা জানতে হবে। তবে চলুন এ সম্পর্কে কিছু হাদিস জেনে নেওয়া যাক। 
তারাবির নামাজের নিয়ম
তারাবির নামাজ কত রাকাত পড়া উচিত এটা জানার আগে আমাদের জানতে হবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কত রাকাত তারাবি পড়তেন। হযরত আয়েশা (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমজান অথবা অন্য কোন মাসে ১১ রাকাতের বেশি নামাজ পড়েননি। (সহিহ বুখারি ১১৪৭, সহিহ মুসলিম ৭৩৮) 

উপরোক্ত হাদিসে ৮ রাকাত তারাবি এবং তিন রাকাত বেতের নামাজের কথা বলা হয়েছে। তবে এটি তারাবির নির্দিষ্ট সংখ্যা নয় বরং এটি তাহাজ্জুতের নামাজের বর্ণনা। আর ২০ রাকাত তারাবির নামাজ চালু করেন হযরত ওমর (রা.)। আর এই ওমরের যুগ থেকেই এখন পর্যন্ত আমরা ২০ রাকাত তারাবির নামাজ পড়ে আসছি। 

তবে আসল কথা হচ্ছে কুরআনে নির্দিষ্টভাবে তারাবির রাকাত সংখ্যা নেই। তাই আমরা যদি ইচ্ছে করি তাহলে ৮ রাকাত কিংবা ২০ রাকাত তারাবির নামাজ পড়তে পারবো। ৮ রাকাত কিংবা ২০ রাকাত যেকোনো টি পড়া আমাদের জন্য জায়েজ রয়েছে। তাই এসব নিয়ে আমাদের মধ্যে কোন সমস্যার সৃষ্টি না করাই উত্তম। 

তারাবির নামাজের ফজিলত ও গুরুত্ব

রমজান মাস আমাদের জন্য একটি বিশেষ নেয়ামত হওয়ার কারণে এই মাসের প্রত্যেকটি ইবাদতের প্রতিদান আল্লাহ তায়ালা বহুগুণে বাড়িয়ে দেন। তাই রমজান মাসে তারাবির নামাজের নিয়ম জানার পাশাপাশি এই নামাজের ফজিলত ও গুরুত্ব সম্পর্কে আমাদের জানা উচিত। কারণ তারাবির নামাজ হচ্ছে এই বরকতময় মাসের একটি অন্যতম ইবাদত। 

তারাবির নামাজের ফজিলত জানার পূর্বে আমরা জানবো এই নামাজ কেন আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমের দিকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কয়েক রাকাত তারাবির নামাজ জামাতে পড়ান, এরপরে তিনি জামাত বন্ধ করে দেন। কারণ রাসূলুল্লাহ বলেছেন, আমি ভয় করলাম, যেন এটি তোমাদের ওপর ফরজ না হয়ে যায়। এখান থেকে আমরা বুঝতে পারি তারাবির নামাজ আমাদের জন্য কতটা গুরুত্ব পূর্ণ। 

আবার তারাবির অত্যন্ত ফজিলত পূর্ণ হওয়ার কারণ হচ্ছে আল্লাহ তা'আলা বলেন, যারা রাতে নিজেদের রবের উদ্দেশে দাঁড়িয়ে অথবা সিজদারত অবস্থায় থাকে, তাদের জন্য রয়েছে মহান পুরস্কার। অর্থাৎ রাতের ইবাদতকে আল্লাহ তা'আলা বেশি পছন্দ করেন। এছাড়াও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, 

যারা রমজান মাসে ঈমান ও সওয়াবের আশায় কিয়াম পালন করবে, তাদের অতীতের সমস্ত গুনাহ আল্লাহ তায়ালা মাফ করে দিবেন। উপরোক্ত এ সকল আয়াত এবং হাদিস থেকে আমরা স্পষ্টভাবে বুঝতে পারি যে তারাবির নামাজ আমাদের জন্য অত্যন্ত ফজিলত পূর্ণ এবং এই নামাজের গুরুত্ব অনেক বেশি। 

তারাবি পড়লে স্বাস্থ্যগত কি উপকার হয় 

তারাবির নামাজ আমাদের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ এবং তারাবির নামাজ পড়ার ফজিলত সম্পর্কে আমরা জেনেছি। পাশাপাশি তারাবির নামাজ পড়ার নিয়মটাও জেনেছি। কিন্তু আমরা কি জানি তারাবি পড়লে আমাদের স্বাস্থ্যগত দিক থেকেও অনেক উপকার সাধিত হয়? 
তারাবির নামাজের নিয়ম
হ্যাঁ, তারাবির নামাজ এমন একটি ইবাদত যেটা আমাদের শরীরে বিভিন্ন দিক থেকে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। চলুন নিচে বিস্তারিত জানি। 

  • তারাবির নামাজ পড়ার ফলে এটি আমাদের হার্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখে, দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার ফলে আমাদের রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক রাখে এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে। 
  • তারাবির নামাজ আমাদের শরীর থেকে অতিরিক্ত কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে, যেটা আমাদের হৃদরোগ প্রতিরোধে সহায়ক হয়। 
  • তারাবির নামাজ দীর্ঘক্ষণ ধরে চলার ফলে এটি আমাদের শরীর থেকে অতিরিক্ত ক্যালরি ধ্বংস করতে সাহায্য করে। যেটা আমাদের শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখে। 
  • আমাদের শরীরে হাড়ে কিংবা জয়েন্টে কোন রকমের ব্যথা থাকলে তারাবির নামাজে রুকু, সিজদা ও দাঁড়ানোর মাধ্যমে সেই ব্যথা সেরে যায়। 
  • পাশাপাশি এটি আমাদের হাঁটুর কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। 
  • তারাবির নামাজ আমাদের মানসিক প্রশান্তি এনে দেয় এবং অতিরিক্ত চিন্তা দূর করতে সাহায্য করে। 
  • সারাদিন রোজা রাখার পরে আমরা যখন তারাবির নামাজ পড়ি সেই মুহূর্তে আমাদের হজম শক্তির উন্নতি ঘটে। কেননা নামাজে ঠিকভাবে সেজদা রুকু করার মাধ্যমে আমাদের পরিপাকতন্ত্রের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পায় যেটা খাবার হজমে সাহায্য করে। 
  • তারাবির নামাজ পড়ার ফলে আমাদের রক্তে গ্লুকোজের লেভেল নিয়ন্ত্রণে থাকে। যেটা ডাইবেটিস রোগীদের জন্য অধিক কার্যকরী। অর্থাৎ তারাবির নামাজ আমাদের শরীর থেকে ডায়াবেটিসের সমস্যা কমাতে সাহায্য করে। 

তারাবির নামাজ না পড়লে কি রোজা কবুল হবে? 

আমাদের অনেকের মনে এই প্রশ্ন রয়েছে যে তারাবির নামাজ না পড়লে কি রোজা কবুল হবে? আমরা যদি এক কথায় এর উত্তর দেই তাহলে, হ্যাঁ। তারাবির নামাজ না পড়লেও রোজা কবুল হবে ইনশা আল্লাহ। কিন্তু এর জন্য যে তারাবির নামাজ ছেড়ে দিবেন এমনটি নয়। ইচ্ছাকৃতভাবে কেউ 

যদি তারাবির নামাজ ছেড়ে দেয় তাহলে সে আল্লাহর বরকত থেকে বঞ্চিত হওয়ার শামিল হয়ে গেল। রোজা আমাদের জন্য ফরজ কিন্তু তারাবি একটি সুন্নত নামাজ। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে বলেছেন, আল্লাহ তাআলা তোমাদের উপরে রোজা ফরজ করেছেন এবং আমি তোমাদের জন্য তারাবি সুন্নত করেছি। (ইবনে মাজাহ ১৩২) 

আমাদের শেষ কথা 

প্রিয় পাঠক আজকের আর্টিকেল থেকে আপনি জানলেন তারাবির নামাজের নিয়ম, তারাবির নামাজের নিয়ত এবং তারাবির মোনাজাত সহ আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে। একজন মুসলমান হিসেবে আমাদের তারাবির নামাজের ফজিলত ও গুরুত্ব, তারাবির নামাজের স্বাস্থ্যগত উপকার কি এবং ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকে তারাবির নামাজ কত রাকাত এটা জানা উচিত যেটা আমরা 

ইতিমধ্যে এই আর্টিকেলে প্রকাশ করেছি। আর আমরা এটা আশা রাখছি আজকে আর্টিকেল থেকে আপনি অনেক বেশি উপকৃত হয়েছেন। আপনি যদি নিয়মিত এই ধরনের গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেল পেতে চান তাহলে এই ওয়েবসাইট নিয়মিত ভিজিট করুন।এখানে আপনি এরকম গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেল পাবেন। 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

হ্যাপিনেস ভ্লগের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হবে।

comment url